এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বনানীতে নিজের বাসভবনে বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্বের ৩০ দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে করোনা ভাইরাস নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন।
বৈঠকে আমেরিকা, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইটালি, ইরান, ভারতের রাষ্ট্রদূতসহ মোট ৩০ জন রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনা ভাইরাসের ফলে বর্তমান সময়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, করোনা ভাইরাসের ফলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ও পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রেখে এ ভাইরাস মোকাবিলায় একযোগে কাজ করতে হবে।
আমেরিকার রাষ্ট্রদূত এ সময় বাংলাদেশ সরকারকে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আগামী দুই দিনের মধ্যে আর্থিক সহায়তা প্রদানেরও আশ্বাস দেন।
চীন, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইটালিসহ আক্রান্ত অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভিসা আদান প্রদানে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে রাষ্ট্রদূতরা তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে উপস্থিত সবাইকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে বলে জানান।
এদিকে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, গত ৫ মার্চ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এ অর্থের বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছি। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সুশীল কুমার পাল স্বাক্ষরিত ওই চিঠির বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করছি শিগগিরই বরাদ্দ দেয়া হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ও ‘কোভিড-১৯’-এর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা/উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ‘কোভিড-১৯’ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখতে হয়। এজন্য সিসিইউ, আইসিইউ, আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু, সহায়ক স্বাস্থ্যসেবা (সাপোর্ট কেয়ার), করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য কিট এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সব জেলা বা জেনারেল হাসপাতালসহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের জন্য চিকিৎসা সুবিধা স্থাপন/ সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এ লক্ষে চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবালয় অংশে সাধারণ থোক বরাদ্দ খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন।
এ অবস্থায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও ‘কোভিড-১৯’-এ আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা সুবিধা স্থাপন বা সম্প্রসারণের জন্য অর্থ বিভাগের অপ্রত্যাশিক খাত হতে ১০০ কোটি বরাদ্দে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সুশীল কুমার পাল বলেন, এখনও বরাদ্দ দেয়া হয়নি। তবে আশা করছি, খুব শিগগিরই বরাদ্দ পাব।
বিশ্বেজুড়ে করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪ হাজার ২৫৮ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৬০০ জন। অপরদিকে করোনায় আক্রান্ত ৬৬ হাজার ৬১৭ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন।
বিশ্বের ১১১টি দেশ ও অঞ্চলে এ ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়েছে। শুধু চীনেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৫৪ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১৩৬ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইতালিতে। দেশটিতে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ১৪৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৬৩১ জনের।